এ লেখচিত্র থেকে যেকোনো প্রসারণশীল তারের আচরণ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। একটি তারের একপ্রান্ত একটি দৃঢ় অবলম্বনে আটকে অপর প্রান্তে কিছু ওজন ঝুলিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে, ওজনের পরিমাণ বাড়ালে তারের দৈর্ঘ্যও বেড়ে যায়। বস্তুর একক ক্ষেত্রফলের উপর ক্রিয়াশীল বল হচ্ছে পীড়ন। বলের ক্রিয়ায় বস্তুর একক মাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে বিকৃতি। এখন পীড়ন ও বিকৃতির লেখচিত্র অঙ্কন করলে ৭.১০ চিত্রের মতো একটি রেখা পাওয়া যাবে।
লেখচিত্রটি O থেকে P বিন্দু পর্যন্ত একটি সরলরেখা, অর্থাৎ P বিন্দু পর্যন্ত তারের পীড়ন বিকৃতির সমানুপাতিক অর্থাৎ তারটি হুকের সূত্র মেনে চলে। ঐ বিন্দুদ্বয়ের মধ্যে যেকোনো অবস্থান থেকে ভার সরিয়ে নিলে বস্তুটি তার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং ঐ বিন্দুদ্বয়ের মধ্যে বস্তু পূর্ণ স্থিতিস্থাপকরূপে আচরণ করে এবং P বিন্দু বস্তুর স্থিতিস্থাপক সীমা নির্দেশ করে।
স্থিতিস্থাপক সীমা অতিক্রম করে ভার চাপালে দেখা যাবে লেখ নিচের দিকে বাঁক নিচ্ছে। এ সময়ে যেকোনো মুহূর্তে (চিত্রে Q বিন্দু) ভার অপসারণ করে নিলেও তারটি আর আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। তখন ভার-সম্প্রসারণ চিত্রে QT হয়। অর্থাৎ তারে একটি স্থায়ী বিকৃতি OT থেকে যায়। ভার আরো বৃদ্ধি করলে ভার-সম্প্রসারণ লেখ অনিয়মিতভাবে ওঠা-নামা করে এবং তারের কোনো কোনো জায়গা সরু হয়ে পড়ে। R পর্যন্ত এরকম চলে। R বিন্দুকে নতি বিন্দু (yeild point) বলে। এরপর ভার আরো বাড়ালে তারের বিভিন্ন জায়গা আরো সরু হতে থাকে এবং কোনো এক জায়গা থেকে তার ছিঁড়ে যায় (চিত্রে S বিন্দু)। S বিন্দুকে সহন সীমা বলে। প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ন্যূনতম যে বল লম্বভাবে প্রযুক্ত হলে তারটি ছিঁড়ে যায় তাকে ঐ তারের অসহ পীড়ন বলে। কোনো তারের অসহ পীড়নকে তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল দিয়ে গুণ করলে অসহ ভার বা অসহ বল পাওয়া যায়।
তখন অসহ ভারের চেয়ে কম ভারে এমনকি স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যেই তারটি ছিঁড়ে যেতে পারে।
হুকের সূত্র থেকে আমরা পাই, স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে কোনো বস্তুর পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা। এ ধ্রুবকই বস্তুর উপাদানের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক ।
:- স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক, E=পীড়ন /বিকৃতি
রাশি : পীড়ন ও বিকৃতি স্কেলার রাশি বলে স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক একটি স্কেলার রাশি।
মাত্রা : যেহেতু বিকৃতির কোনো মাত্রা নেই, সুতরাং স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের মাত্রা হবে পীড়নের মাত্রা
অর্থাৎ বল/ক্ষেত্রফল এর মাত্রা অর্থাৎ ML-1T-2
একক : যেহেতু বিকৃতির কোনো একক নেই, সুতরাং স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের একক হবে পীড়নের একক অর্থাৎ, Nm-2বা, Pa
বিকৃতি ও পীড়নের বিভিন্নতার জন্য স্থিতিস্থাপকতার গুণাঙ্ক বিভিন্ন রকমের হয় ।
একে Y দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
ইয়ং গুণাঙ্ক, Y = দৈর্ঘ্য পীড়ন/দৈর্ঘ বিকৃতি
এ প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল ও L দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট একটি তার কোনো দৃঢ় অবলম্বন থেকে ঝুলিয়ে (চিত্র : ৭.১১) যদি তারটির নিচের প্রান্তে লম্বভাবে F বল প্রয়োগ করা হয় তাহলে তারের দৈর্ঘ্য কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। তারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি / হলে,
দৈর্ঘ্য বিকৃতি = দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি/আদি দৈর্ঘ্য =
এবং দৈর্ঘ্য পীড়ন =
সুতরাং Y = ... …. (7.8)
যদি তারের নিচের প্রান্তে M ভর ঝুলানো হয় তাহলে, F = Mg, এখানে g = অভিকর্ষজ ত্বরণ। আবার তারটির ব্যাসার্ধ যদি r হয় তাহলে A = πr2 সেক্ষেত্রে, r
.. ... (7.9)
যদি A =1 একক এবং l = L হয়, তবে (7.8) সমীকরণ অনুসারে F = Y হয়।
সুতরাং একক প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট কোনো তারের দৈর্ঘ্য বরাবর যে বল প্রয়োগ করলে দৈর্ঘ্য বিকৃতি একক হয় অর্থাৎ তারটির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি আদি দৈর্ঘ্যের সমান হয় তাই ইয়ং গুণাঙ্ক ।
যেহেতু বিকৃতির কোনো মাত্রা নেই, সুতরাং Y-এর মাত্রা পীড়নের মাত্রার অনুরূপ হবে অর্থাৎ ML-1T-2 এবং এসআই পদ্ধতিতে এর একক Nm-2 or Pa
ইস্পাতের ইয়ং গুণাঙ্ক 2 x 1011 Nm-2 বলতে বোঝায় 1 m2 প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট ইস্পাতের দণ্ডের দৈর্ঘ্য বরাবর 3 x 1011 N বল প্রয়োগ করা হলে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি আদি দৈর্ঘ্যের সমান হবে।
দৃঢ়তার গুণাঙ্ককে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
কোনো বস্তুর পৃষ্ঠে স্পর্শক বরাবর বল প্রয়োগ করার ফলে যদি ব্যবর্তন কোণ ও উৎপন্ন হয় এবং ঐ পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল A হয় (চিত্র : ৭.৯) তাহলে
দৃঢ়তার গুণাঙ্ক, n = ব্যবর্তন পীড়ন/ব্যবর্তন বিকৃতি =
বা, n =
এখন, = 1 একক এবং A = 1 একক হলে, F = n হয়
অর্থাৎ 1 রেডিয়ান ব্যবর্তন কোণ সৃষ্টি করতে বস্তুর পৃষ্ঠের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপর যতটা স্পর্শকীয় বল প্রয়োগ করতে হয় তাই ঐ বস্তুর দৃঢ়তার গুণাঙ্ক ।
যেহেতু শুধু কঠিন পদার্থেরই নির্দিষ্ট আকার থাকে, সেজন্য দৃঢ়তার গুণাঙ্ক শুধু কঠিন পদার্থেরই বৈশিষ্ট্য।
দৃঢ়তার গুণাঙ্কের মাত্রা ও একক ইয়ং-এর গুণাঙ্কে মাত্রা ও এককের অনুরূপ।
অ্যালুমিনিয়ামের দৃঢ়তার গুণাঙ্ক 2.6 x 1010 Nm-2 বলতে আমরা বুঝি যে, একটি অ্যালুমিনিয়ামের ঘনকের আকৃতি পরিবর্তন করে। রেডিয়ান কোণ উৎপন্ন করতে ঐ ঘনকের পৃষ্ঠের প্রতি একক বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের ওপর 2.6 x 1010 N স্পর্শকীয় বল প্রয়োগ করতে হবে।
আয়তন গুণাঙ্ককে B দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আয়তন গুণাঙ্ক, B= আয়তন পীড়ন/আয়তন বিকৃতি
মান : যদি V আয়তনের কোনো বস্তুর উপর চার দিক থেকে লম্বভাবে F বল প্রয়োগ করা হয় (চিত্র ৭.৭ ) এবং তাতে যদি বস্তুর আয়তন হ্রাস পায়, তাহলে আয়তন বিকৃতি = v/V। যদি বস্তুটির পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল A হয় তাহলে
আয়তন পীড়ন = F/A=
সুতরাং B =
কঠিন, তরল বা গ্যাস সবারই আয়তন থাকায় আয়তন গুণাঙ্ক পদার্থের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
পারদের আয়তন গুণাঙ্ক 2.8 x 1010 Nm-2 বলতে বোঝায় যে পারদের একক আয়তন বিকৃতি সৃষ্টি করতে এর প্রতি 1 m2 ক্ষেত্রফলের ওপর 2.8 x 1010 N বল প্রয়োগ করতে হয়।
সংনম্যতা (Compressibility) : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে আয়তন বিকৃতি ও আয়তন পীড়নের অনুপাতকে সংনম্যতা বলে।
অর্থাৎ, সংনম্যতা = আয়তন বিকৃতি /আয়তন পীড়ন
অর্থাৎ সংনম্যতা হচ্ছে আয়তন গুণাঙ্কের বিপরীত রাশি। আয়তন গুণাঙ্ককে তাই কখনো কখনো অসংনম্যতা (incompressibility) বলা হয়।